মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

অভিনব আম চাষ!

ad300
Advertisement
পোকা দমনের জন্য বিষ নয়, পাতা হয়েছে ফাঁদ। ছবি: প্রথম আলোআমে ফরমালিন আর কার্বাইডের ব্যবহার নিয়ে দেশে যখন ব্যাপক হইচই হচ্ছে, এর নেতিবাচক প্রচারের অনেক ভোক্তা সুস্বাদু এই মৌসুমি ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও মাঠে নেমেছেন কম। আমের বাজারে চলছে ব্যাপক মন্দা। এই সময়ে শাহ কৃষি জাদুঘর এবার ফরমালিন-কার্বাইড তো দূরের কথা, কোনো কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই আম উৎপাদনের সক্ষম হয়েছে।
এক হেক্টর আয়তনের এই বাগানে এবার পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ টন আম হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে আম চাষে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর শাহ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেসরকারি পর্যায়ে এটি বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবেশবান্ধব কৃষি আন্দোলন করে আসছেন। এখানে কৃষকদের বিনা মূল্যে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
কয়েক বছর ধরে জাহাঙ্গীর শাহ তাঁর নিজের এক হেক্টর আয়তনের একটি আমবাগানে রাসায়নিকমুক্ত আম ফলানোর চেষ্টা করে আসছেন। এই কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে তিনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তিনি আমকে রাসায়নিকমুক্তভাবে উৎপাদন করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা লড়াই চালিয়েছেন। এবার তিনি এই কাজে প্রায় সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহর পদ্ধতিতে আমে সরাসরি কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। পোকা দমনের জন্য কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্সফেরোমন ফাঁদ, বিষটোপ ও অ্যান্টিফিডেন্ট ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন করেছেন। এভাবেই তিনি সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহর (ডানে) সঙ্গে বিদেশি গবেষকেরা ঘুরে দেখছেন আমের বাগানজাহাঙ্গীর শাহ জানান, মুকুলের আগে হপার পোকা দমনের জন্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়—এমন কীটনাশক সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করেছেন। গাছে মুকুল আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমে আর কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে আম পরিচর্যা করতে গিয়ে কিছু আমের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করলে হয়তো আমের ফলন আরও বেশি হতো। কিন্তু পরিবেশবান্ধব উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত আম উৎপাদনের জন্য আপাতত তিনি এই ক্ষতি মেনে নিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, ভবিষ্যতে গৃহীত পদ্ধতিকে আরও টেকসই ও কার্যকর করতে পারবেন। তখন আর এ ধরনের ক্ষতি হবে না।
জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেনের আকাফুজি এগ্রো টেকনোলজি নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি আম প্রক্রিয়াজাত করে ডিহাইড্রেড ম্যাঙ্গো স্লাইস ও ডাইস তৈরির জন্য কাজ করছেন। তাঁর অধীনে জাপানি গবেষক কেনজি সুজি দুই বছর ধরে গবেষণাসহকারী হিসেবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাত করে স্লাইস ও ডাইস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ বছর তাঁরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনে যাচ্ছেন। তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহর রাসায়নিকমুক্ত সব আম নিতে চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এম মনজুর হোসেন বলেন, তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাতকরণের যে কাজ করছেন, তার জন্য রাসায়নিকমুক্ত আম প্রয়োজন। এ জন্য তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। একাধিকবার তাঁর বাগান পরিদর্শন করেছেন। জাহাঙ্গীর শাহ তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী আম উৎপাদন করেছেন। এ বছর তাঁদের চাহিদা ছিল প্রায় ৫০ টন, কিন্তু জাহাঙ্গীর শাহ হয়তো ১৫ থেকে ২০ টন দিতে পারবেন।
কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীর শাহর আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে প্রায় ১০০টি সেক্সফেরোমন ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। তার ভেতরে পোকা পড়ে মরে আছে। এ ছাড়া বাগানের ভেতরে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি বিষটোপ রাখা হয়েছে। বাগানের শ্রমিকদের আরও কিছু জৈবপদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায়। কৃত্রিম কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি বলে আমের মনকাড়া কোনো রং হয়নি। জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, তাঁর আমের আকর্ষণীয় রং হয়নি, কিন্তু খেতে সুস্বাদু এবং নিরাপদ।
Share This
Previous Post
Next Post

Pellentesque vitae lectus in mauris sollicitudin ornare sit amet eget ligula. Donec pharetra, arcu eu consectetur semper, est nulla sodales risus, vel efficitur orci justo quis tellus. Phasellus sit amet est pharetra

1 টি মন্তব্য:

আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখককে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগাই তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখকের মনে আঘাত হানে ! কারণ একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্ররেনা জাগাই !!