শুক্রবার, ১৫ মে, ২০১৫

"টাইটানিক সম্পর্কে জানুন"

ad300
Advertisement
:::::::::আরএমএস টাইটানিক::::::::
একটি বৃহদাকার সামুদ্রিক জাহাজ। ১৫ এপ্রিল
১৯১২ এটি হিমশৈলের (আইসবার্গের) সঙ্গে
সংঘর্ষে ডুবে যায়। ঐ সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ
আধুনিক ও বিলাসবহুল যাত্রিবাহী জাহাজ।
নামকরণ
‘টাইটান’ ছিল গ্রীক পুরানের সৃষ্টির শক্তিশালী
দেবতা। এই দেবতার কাজই ছিল শুধু সৃষ্টি করা।
তার নামানুসারে এই জাহাজের নাম রাখা
হয়েছিল ‘টাইটানিক’। এটি আসলে জাহাজটির
সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম ছিল ‘আর এম এস
টাইটানিক’। ‘আর এম এস’ এর অর্থ হচ্ছে ‘রয়্যাল
মেল স্টিমার’। অর্থাৎ পুরো জাহাজটির নাম
ছিল ‘রয়্যাল মেল স্টিমার টাইটানিক’।



নির্মাণকালীন তথ্য
টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়
১৯০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করে ১৯১২
সালে জাহাজটির কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের
‘হোয়াইট স্টার লাইন’ এই জাহাজটি নির্মাণ
করেন। ৬০ হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার
দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জাহাজটি নির্মাণ করতে সে
সময় খরচ হয়েছিল ৭৫ লাখ ডলার।
যাত্রা শুরু
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে
নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে
টাইটানিক। সে সময় টাইটানিকে মোট যাত্রী
ছিল ২২০০ জন এবং কয়েকশ কর্মী। শুরুতেই মাত্র
চার ফুটের জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’
জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ হয়। ৭৭
নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ থেকে ২৭৪ জন
যাত্রী তুলে নেয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায়
আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে জাহাজে
ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং সাতজন
দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী। [১] বৃটেন থেকে
আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায়
যাওয়া খুবই বিপদজনক ছিল। ছোটখাটো
জাহাজের পক্ষে বলা চলে জীবন বাজি রেখে
যাত্রা করা। কেননা হঠাৎ সামুদ্রিক ঝড়-
জলোচ্ছ্বাসে পড়ার আশংকা সবসময়ই ছিল।
তারপরও এত সংখ্যক যাত্রী সমুদ্রের রোমাঞ্চকর
এই ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য টাইটানিকের যাত্রী
হয়েছিল। টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির ভাড়া
ছিল ৩১০০ ডলার। আর তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল
৩২ ডলার।
দুর্ঘটনার দিন দুপুরের ঘটনা
১৪ই এপ্রিল দুপুর দুইটার দিকে ‘Amerika’ নামের
একটি জাহাজ থেকে রেডিওর মাধ্যমে
টাইটানিক জাহাজকে জানায় তাদের
যাত্রাপথে সামনে বড় একটি আইসবার্গ রয়েছে।
শুধু তাই নয় পরবর্তীতে ‘Mesaba’ নামের আরও
একটি জাহাজ থেকে এই একই ধরনের সতর্কবার্তা
পাঠানো হয় টাইটানিকে। এ সময় টাইটানিকের
রেডিও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন জ্যাক
পিলিপস ও হ্যারল্ড ব্রীজ। দু’বারই তাদের
দুজনের কাছে এই সতর্কবার্তাকে অপ্রয়োজনীয়
মনে হয়। তাই তারা এই সতর্কবার্তা
টাইটানিকের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠান নি।
টাইটানিক দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট আগে
Californian সিপের রেডিও অপারেটর
টাইটানিকের সাথে যোগাযোগ করে
আইসবার্গটি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিল কিন্তু
টাইটানিকের রেডিও অপারেটর ক্লান্ত জ্যাক
পিলিপস্ রাগান্বিত ভাবে বলে "আমি কেইপ
রেসের সাথে কাজে ব্যস্থ এবং লাইন কেটে
দেয়।" ফলে Californian সিপের রেডিও অপারেটর
তার ওয়ার্লেস বন্ধ করে ঘুমাতে চলে যায়। বলা
চলে তাদের এই হেয়ালীপনার কারণেই ডুবেছে
টাইটানিক।
দুর্ঘটনায় পড়া
টাইটানিক যখন দুর্ঘটনা স্থলের প্রায়
কাছাকাছি চলে আসে। তখনই জাহাজের
ক্যাপ্টেন সামনে আইসবার্গ এর সংকেত পান।
আইসবার্গ হল সাগরের বুকে ভাসতে থাকা
বিশাল বিশাল সব বরফখণ্ড। এগুলোর সবচেয়ে
ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এগুলোর মাত্রই আট ভাগের
এক ভাগ পানির উপরে থাকে। মানে, এর বড়ো
অংশটাই দেখা যায় না। তখন তিনি জাহাজের
গতি সামান্য দক্ষিণ দিকে ফিরিয়ে নেন। সে
সময় টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষন কারীরা
সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই আইসবার্গটি
দেখতে পায় কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক
আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দেন
এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা
করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে
আর বাঁচানো সম্ভব হয় নি। এর ডানদিক
আইসবার্গের সাথে প্রচন্ড ঘষা খেয়ে চলতে
থাকে। ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ
জুড়ে চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি যেই
স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম হলো ‘গ্রেট
ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ড’। টাইটানিক
সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে
ভেসে থাকতে পারতো। কিন্তু পানিপূর্ণ হয়ে
গিয়েছিল ৫টি কম্পার্টমেন্ট। এছাড়া পানি
প্রতিরোধ এর জন্য ১২টি গেট ছিল। ভাগ্যের
নির্মম পরিহাসে এমন জায়গায় জাহাজটির
ধাক্কা লাগে যে, সবগুলো গেটের পানি
প্রতিরোধ বিকল হয়ে যায়। পানির ভারে আস্তে
আস্তে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে
টাইটানিক।
সম্পূর্ণ অংশ তলিয়ে যাওয়া
রাত ২ টা থেকে ২ টা ২০ মিনিটের মধ্যে
টাইটানিকের সম্পূর্ণ অংশ আটলান্তিকের বুকে
তলিয়ে যায়। ডুবে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে
জাহাজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিকল হয়ে যায়।
আরএমএস টাইটানিকের নিমজ্জন
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার
টাইটানিক যখন সমুদ্রের বুকে তলিয়ে যায় ঠিক
তার এক ঘন্টা ৪০ মিনিট পর রাত ৪ টা ১০
মিনিটে সেখানে আসে ‘দি কারপাথিয়া’
নামের একটি জাহাজ। যারা সমুদ্রের বুকে ভেসে
বেড়াচ্ছিলেন তাদেরকে উদ্ধার করে সকাল
সাড়ে আটটার দিকে নিউইয়র্কে চলে যায়।
ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া
দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত
অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী। রবার্ট
বালার্ড নামক ফরাসি বিজ্ঞানী টাইটানিককে
খুঁজে বের করন। ১৯৮৫ সালে এর অবস্থান সম্পর্কে
ধারণা পাওয়া যায়। আনসিংকেবল টাইটানিক
এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৬০০ ফুট নিচে
আটলান্টিকের তলদেশে স্থির হয়ে আছে।
দ্বিখণ্ডিত জাহাজটির দুটো টুকরো ১৯৭০ ফুট দূরে
অবস্থান করছে। টাইটানিকের সম্মুখভাগ
সমুদ্রতলে ৬০ ফুট মাটির গভীরে প্রোথিত। ১৪
জুলাই ১৯৮৬, ঘটনার ৭৪ বছর পর টাইটানিক
পুনরাবিষ্কৃত হয়।
টাইটানিক সম্পর্কে ১২টি ভয়ংকর
তথ্য ।।
না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াটাই বেশ মুশকিল।
কিন্তু এই টাইটানিকের সাথে জড়িত এমন অনেক
তথ্য আছে যা আজো আমাদের অজানা। আজ এরকম
১২টি তথ্য জানাবো আপনাদের। জেনে হয়ত কিছুটা
হলেও অবাক হবেন আপনারা। তাহলে চলুন শুরু করা
যাক।
০১) টাইটানিকে কর্মরত একজন জাপানি বেঁচে যান
এই দূর্ঘটনা থেকে। এরপর যখন তিনি তার নিজ দেশ
জাপানে ফিরে যান তখন তার এলাকার লোকজন
তাকে ধিক্কার জানায় কেননা সে জাহাজের
সাথে ডুবে না যেয়ে বেঁচে চলে আসে।
০২) টাইটানিক সিনেমার হৃদয় ষ্পর্শকারি এক দৃশ্য
ছিল টাইটানিক ডোবার সময় বাদ্যযন্ত্র বাদকেরা
তাদের বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিল। সত্যি সত্যি এমনটি
ঘটেছিল। বরফের সাথে সংঘর্ষের পর কয়েক ঘন্টা
ধরে তারা বাদ্যযন্ত্র বাজান।
০৩) বরফের সাথে সংঘর্ষের ৩০ সেকেন্ড পূর্বে
এটির তারা দেখতে পান এবং সাথে সাথেই
জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জানানো হয় বিষয়টি।
তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা নিলে এই সংঘর্ষ এড়ানো
সম্ভব ছিল।
০৪) 'Milton Hershey' যে কিনা বিশ্ববিখ্যাত
চকলেট নির্মাতা কম্পানি ' The Hershey
Company' এর প্রতিষ্ঠাতা। তার হাত ধরেই সব
থেকে মজাদার স্বাধের কিছু চকলেট তৈরি করা
হয়েছে। টাইটানিকে যাত্রার জন্য তিনি টিকিট
কিনেছিলেন কিন্তু কোন কারনে একদম শেষ মূহুর্তে
তিনি যাত্রা স্থগিত করেন।
০৫) টাইটানিকের চারটি ধুঁয়া বের হবার চিবনির
মধ্যে চতুর্থ চিবনিটি শুধু মাত্র জাহাজটিকে
সাজাবার জন্য ব্যাবহৃত হয়েছিল।
০৬) টাইটানিকের অর্ধেকেরো বেশি লাইফ বোর্ড
তার ধারন ক্ষমতার অনেক কম যাত্রী ছিল।
০৭) টাইটানিক ইতিহাসের একমাত্র জাহাজ যা
বরফের সাথে সংঘর্ষের ফলে ডুবে যায়।
০৮) টাইটানিকের যাত্রার পূর্বের দিন যাত্রীদের
নিয়ে ছোট একটা ট্রেনিং এর আয়োজন করা
হয়েছিল। যেখানে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে তারা কি
করবে তা শেখাবার জন্য। কিন্তু কোন এক অজানা
কারনে তা বাতিল করা হয়।
০৯) টাইটানিক যে বরফের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল
সেই বরফ খন্ডটি সমুদ্রে ভাসমান ছিল তৎকালীন
সময় হতে প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্ব হতে।
১০) টাইটানিক জাহাজ তৈরিতে যে পরিমান অর্থ
খরচ হয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি অর্থ খরচ
হয়েছে টাইটানিক সিনেমা তৈরিতে। তাহলে চলুন
এবার দেখে নেই টাইটানিক তৈরিকালীন কিছু
ছবি।
১১) টাইটানিক ডুবে যাবার পর পানিতে ভাসমান
অবস্থায় যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে
অন্যতম একজন হলেন টাইটানিক জাহাজের রাধক।
যদিও প্রচন্ড ঠান্ডায় তার চারিপাশে সকলে মারা
গিয়েছিল কিন্তু সে জাহাজ ডুবার পূর্ব মূহুর্ত
পর্যন্ত যে পরিমান এলকোহল পান করেছেন তা তার
দেহ ঠান্ডা পানিতেও উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে।
১২) 'The Californian' জাহাজটি ডুবন্ত টাইটানিক
থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। কিন্তু তাদের কাছে
রেডিও বার্তা পৌছাতে দেরি করে টাইটানিক।
তা না হলে হয়ত তারা আরো বেশি যাত্রী উদ্ধার
করতে পারত।
Share This
Previous Post
Next Post

Pellentesque vitae lectus in mauris sollicitudin ornare sit amet eget ligula. Donec pharetra, arcu eu consectetur semper, est nulla sodales risus, vel efficitur orci justo quis tellus. Phasellus sit amet est pharetra

1 টি মন্তব্য:

আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখককে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগাই তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখকের মনে আঘাত হানে ! কারণ একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্ররেনা জাগাই !!