![]() |
Advertisement |
পৃথিবীর বাইরের মহাকর্ষীয় শক্তির (বিশেষ
করে চাঁদের) প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল ফুলে
ওঠাকে জোয়ার ও নেমে যাওয়ার ঘটনাকে
ভাঁটা (একত্রে জোয়ার-ভাটা) বলা হয়।
জোয়ার-ভাটা
কোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং
দুইবার ভাটা -
পৃথিবী-চন্দ্র সমাহারের অবিরত পরিবর্তন
হচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সাথে এর সম্পর্ক
রয়েছে। চাঁদের আকর্ষণে চাঁদের দিকে
অবস্থিত সমুদ্রের পানি তার নিচের মাটি
অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে
চাঁদের দিকে অবস্থিত পানি বেশি ফুলে
উঠে। আবার পৃথিবীর যে অংশে অবস্থিত
পানি চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে,
সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের
পানি অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক অধিক জোরে আকৃষ্ট
হয়। কারণ এই মাটি পানি অপেক্ষা চাঁদের
বেশি নিকটবর্তী। ফলে সেখানকার পানি
মাটি থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ ছাপিয়ে
উঠে। এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে।
পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের
চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে
সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যে-কোন অংশ একবার
চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের
বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যে
কোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার
ভাটা হয়।
তবে জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও
অনেকাংশে দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায়
সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম
কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর
একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে
তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উঁচু জোয়ার
হয়, জোয়ারের পানি বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই
অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা
হয়। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং
চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ
পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ
দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই সবচেয়ে নিচু
জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল বলে আখ্যায়িত
করা হয়। জোয়ার বলতে আমরা শুধুমাত্র
সমুদ্রের পানির স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর
স্থলভাগেও অনুরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়।
চাঁদের আবর্তন
চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার
কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা
পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ট সবসময় দেখতে
পাই। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষীণ করতে ২৭ দিন,
৭ ঘন্টা, ৪৩ মিনিট এবং ১১ সেকেন্ড সময় নেয়
কিন্তু সমসামিক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর
পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯.৫ দিন হিসেবে গণনা
করে। একটি ঘণ্টা আবর্তনের পর্যায়কাল
অর্ধেক ডিগ্রী দূরত্ব অতিক্রম করে। চাঁদ
পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব
দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদ
একদিন বা ২৪ ঘন্টায় ১৩°কোণ অতিক্রম করে।
সুতরাং পৃথিবীকে প্রদক্ষীণ চাঁদের সময় লাগে
২৭ দিন, ৭ ঘন্টা, ৪৩ মিনিট এবং ১১ সেকেন্ড।
এই জন্য আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ট
দেখে থাকি। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের
শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পেয়ে থাকি।
চাঁদ আকাশের সবসময় একটি অঞ্চল থাকে
তাকে জৌডিঅ্যাক বলে। যা ক্রান্তিবৃত্তের
প্রায় ৮ ডিগ্রি নিচে এবং গ্রহণরেখা উপরে
অবস্থান করে। চাঁদ প্রতি ২ সপ্তাহে একে
অতিক্রম করা।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর চাঁদের মহাকর্ষের
প্রভাব
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। এটি পৃথিবীকে
একটি নির্দিষ্ট উপ-বৃত্তাকার কক্ষপথে
প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণ করে। ফলে পৃথিবী-চন্দ্র
সমাহারের অবিরত পরিবর্তন হচ্ছে। জোয়ার-
ভাটার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। আবার
মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে চাঁদ ও পৃথিবী একে
অপরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর উপর চাঁদের এই
আকর্ষণের প্রভাব দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
পৃথিবীর যে পাশ চাঁদের দিকে থাকে সে
পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব কম থাকায় আকর্ষণ
বেশি থাকে, আর পৃথিবীর অপর পাশে চাঁদ
থেকে দূরত্ব বেশি থাকায় আকর্ষণ কম থাকে।
এই আকর্ষণই জোয়ার-ভাটার সাথে সম্পর্কিত।
জোয়ার-ভাটার কারণ -
পৃথিবীর যে পাশে চাঁদ থাকে সে পাশে চাঁদের
আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সমুদ্রের জল তার নিচের
মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে
চাঁদের দিকে অবস্থিত জল বেশি ফুলে উঠে। একই
সময়ে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের বিপরীত দিকে
থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের
জল অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়।
আবার চাঁদ থেকে জলের দূরত্ব মাটি অপেক্ষা বেশি
থাকায় জলের উপর চাঁদের আকর্ষণ কম থাকে। ফলে
সেখানকার জল চারিদিকে ছাপিয়ে উঠে।
এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে। ফলে একই
সময়ে চাঁদের দিকে এবং চাঁদের বিপরীত দিকে
পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের এই ফুলে উঠাকে জোয়ার
বলে।
আবার পৃথিবী ও চাঁদের ঘুর্ণনের কারণে চাঁদ পৃথিবী
থেকে দূরে সরে গেলে ফুলে ওঠা জল নেমে যায়।
জলের এই নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। পৃথিবী যে
সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন
করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন
অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার
চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর
যেকোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা
হয়।
জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকাংশে
দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ
চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ
যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে
অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উচু
জোয়ার হয়, জোয়ারের জল বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই
অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়।
আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের
মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন
একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়।
তাই সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল
বলে আখ্যায়িত করা হয়। জোয়ার বলতে আমরা
শুধুমাত্র সমুদ্রের জলের স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর
স্থলভাগেও অনুরুপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়।
মুখ্য জোয়ার:::::::::
চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকালে পৃথিবীর
যে অংশ চন্দ্রের নিকটবর্তী হয়, সেখানে
চন্দ্রের আকর্ষন সর্বাপেক্ষা বেশি হয়। এ
আকর্ষনে চারদিক হতে পানি এসে চন্দ্রের দিকে
ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। এরুপে সৃষ্ট জোয়ারকে
মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলা হয়।
গৌণ জোয়ার::::::::::
চন্দ্র পৃথিবীর যে পার্শ্বে আকর্ষণ করে তার
বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ শুক্তির
প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি
হয়। এতে চারদিক হতে পানি ঐ স্থানে এসে
জোয়ারের সৃষ্টি করে। এভাবে চন্দ্রের বিপরীত
দিকে যে জোয়ার হয় তাকে গৌণ জোয়ার বা
পরোক্ষ জোয়ার বলে।
0 Comment:
আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখককে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগাই তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখকের মনে আঘাত হানে ! কারণ একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্ররেনা জাগাই !!