Advertisement |
বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় প্রায়ই। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের নেটে কিংবা একাডেমি ভবনে। চুটিয়ে আড্ডা চলে, খুনসুটি হয় দুজনের মধ্যে। কিন্তু আগের মতো আর প্রতি পদক্ষেপ মেলে না তাঁদের। মিলবে কিভাবে? মুস্তাফিজুর রহমান যে এখন জাতীয় দলের মহাতারকা! আর সাইফ উদ্দিন আছেন সেই আগের জায়গাতেই; অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
The Ataturk Times |
বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ পৌঁছে গেছেন তাঁর গন্তব্যে। অলরাউন্ডার সাইফ সেই পথ খুঁজছেন প্রাণান্ত চেষ্টায়। তাঁর মনের আকাশে তাই মেঘ জমে কখনো-সখনো। কিন্তু পরক্ষণেই আবার প্রতিজ্ঞার সূর্যটা যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে। বন্ধু মুস্তাফিজকে তাই সাইফ বলতে পারেন, 'দেখিস, একদিন নিশ্চয়ই আবার তোর টিমমেট হব। যেমনটা ছিলাম আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।'
ভবিষ্যতের কোনো বাঁকে জাতীয় দলে জায়গা করে নেবেন এই অলরাউন্ডার, এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্দরমহলে সংশয় সামান্য। বয়সভিত্তিক দলগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে যে আলো ছড়িয়ে এগোচ্ছেন সাইফ! মিডল অর্ডারে বাঁহাতি বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে। আর ভীষণ কার্যকরী ডানহাতি পেস বোলিংয়ে। এমন একজন অলরাউন্ডারের জন্য অনেক দিন ধরেই তো হাপিত্যেশ করছে বাংলাদেশ! আবার মুস্তাফিজের সতীর্থ হওয়ার স্বপ্ন সাইফের জন্য তাই আকাশকুসুম কল্পনা নয় মোটেও।
শৈশবে ক্রিকেটার হওয়াটাই অবশ্য আকাশকুসুম কল্পনাই ছিল। পুলিশ অফিসার বাবা যে একদমই পছন্দ করতেন না খেলাটি! তাঁর চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ফেনীর এই ছেলে লুকিয়ে লুকিয়ে বন্ধুতা গড়ে তোলেন ক্রিকেটের সঙ্গে। টিভিতে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং দেখে ইচ্ছে জাগে জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য রয়েছে কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল নিজের ভেতর। সেটি দূর হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে এত দিন পরও কণ্ঠ কেঁপে ওঠে সাইফের, 'আমার বড় ভাই কফিল নিজে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। সেটি পারেননি বলে আমাকে বানাতে চান ক্রিকেটার। বাবার বকাবকি থেকে উনিই আমাকে বাঁচিয়ে রাখতেন সব সময়। আর এলাকার অপু ভাই আমার খেলা দেখে অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা দলে ট্রায়াল দিতে নিয়ে যায়। সেখানে টেকার পরই মনে হয়েছে, ক্রিকেটে আমার হবে।' বেঁচে থাকলে সাইফের বাবাও নিশ্চয়ই এখন এর সঙ্গে সায় দিতেন।
অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রান করেন সাইফ। অনূর্ধ্ব-১৬তে পুরো দেশের মধ্যে। সঙ্গে সেরা অলরাউন্ডারের পুরস্কার। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। পারফর্ম খারাপ করছিলেন না, কিন্তু ইনজুরির কারণে ছিলেন না নিজের সহজাত শ্রেষ্ঠত্বে। অবশেষে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুটি সিরিজেই যেন নিজেকে চেনানোর পথে দীর্ঘ পদক্ষেপ এঁকে দেন সাইফ। ঘরের মাঠের সিরিজে সাত ম্যাচে ১১ উইকেটের পাশাপাশি ১২২ রান। ফিরতি সফরে ব্যাটিংটা তেমন ভালো না হলেও সাত শিকার করেন ঠিকই।
তবে শুধু পরিসংখ্যান সাইফের পারফরমেন্সের প্রতিফলক নয়। যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা যে রয়েছে তাঁর! সেটি স্লগ ওভারের বোলিংয়ে হোক কিংবা বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে। গত এপ্রিলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে পঞ্চম ম্যাচে যেমন ৫ উইকেট নিয়ে অসম্ভব এক ম্যাচ জেতান দলকে। আবার এক খেলা পরই লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে ব্যাটিং করে অপরাজিত ৩৪ রানে ছিনিয়ে আনেন ১ উইকেটের জয়। 'কফিল ভাই চেয়েছিল অন্তত একটি খেলাতে যেন ম্যাচসেরা হই। দুটিতে হয়েছি। খুব খুশি হন তিনি'- বলতে গিয়ে আবারও যেন আবেগ ভর করে সাইফের কণ্ঠে।
এবার তাঁর লক্ষ্য সেরা অলরাউন্ডার হয়ে বাংলাদেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো। এরপর জাতীয় দলে মুস্তাফিজের সতীর্থ হওয়ার প্রতিজ্ঞাপূরণের পালা। আর একবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওঠার পরের লক্ষ্য? আত্মবিশ্বাসের ঝিলিকে বলেন সাইফ, 'আমি চাই বাংলাদেশের কোরে অ্যান্ডারসন হতে। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দেশকে জেতাতে চাই অনেক অনেক ম্যাচ।'
মুস্তাফিজ এরই মধ্যে জেতানো শুরু করেছেন বাংলাদেশকে। তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করার জন্য বন্ধু সাইফও আসছেন অদূর ভবিষ্যতে।
সূত্র: কালের কন্ঠ।
0 Comment:
আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখককে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগাই তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখকের মনে আঘাত হানে ! কারণ একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্ররেনা জাগাই !!